দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো মৌসুমের দ্বিতীয় দফায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ১৭টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন লাখ পরিবারের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। আশঙ্কা করা হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এবারের বন্যায় ২৩টি জেলা প্লাবিত হতে পারে এবং তা আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। বলা হয়েছে, পদ্মা, যমুনা ও তিস্তাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রংপুর, জামালপুর, মাদারীপুর, পাবনা ও কুড়িগ্রামে বন্যার প্রকোপ বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি হারিয়ে রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অনেক মানুষ। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমনের চারা রোপণ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। অপ্রতুল ত্রাণ ও সাহায্যের কারণে দুর্গত মানুষ চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
বন্যাকবলিত ১৭ জেলায় সরকারিভাবে এ পর্যন্ত মাত্র আট হাজার ২১০ টন চাল, দুই কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গোখাদ্য কেনার জন্য ৪৮ লাখ টাকা এবং শিশুখাদ্য কেনার জন্য ৪৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামতে ৩০০ বান্ডেল ঢেউটিন এবং ৯ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এসব তথ্য দিয়েছেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। বন্যাকবলিত প্রায় ১৫ লাখ মানুষের জন্য এই সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল। তা ছাড়া অনেক জায়গায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কাজে কোনো সমন্বয় করা হচ্ছে না। ফলে ত্রাণ দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার ঢাকার নি¤œাঞ্চলসহ বড় তিন নদী ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী ১৩ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। পানি বাড়ছে বড় বড় প্রায় সব নদীতে এবং আগামী তিন দিন এসব নদীর পানি বাড়তে থাকবে। যমুনার আরিচা পয়েন্টে বুধবার বন্যার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানানো হয়। তবে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ছয় জেলায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল।
রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, পাবনা, জামালপুর, শেরপুর ইত্যাদি জেলায় পরিস্থিতি গুরুতর। পাবনার বেড়া, সুজানগর, সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার নিচু এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ায় শত শত বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ এলাকা বেড়া এবং তার পরই রয়েছে সুজানগর উপজেলা। প্রধানত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে এবার পাবনা সদর ও ঈশ্বরদীতে ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। চার দিনের প্রবল বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার চারটি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার একটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার ৫০০ পরিবার। কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, রোপা আমন ধানের বীজতলা, সবজি এবং শতাধিক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
বন্যায় জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। মঙ্গলবার বিকেলে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলা সদরসহ ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার অন্তত ৪০টি ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলের ফসলি ক্ষেত, বসতভিটা, বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চার লক্ষাধিক বন্যার্ত মানুষ।
করোনা পরিস্থিতির এই দুর্যোগের সময় বন্যা অনেকটা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। বৃষ্টি না কমলে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছবে। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেটুকুই সাহায্য পাওয়া যায় সেটুকু যাতে প্রকৃত ভুক্তভোগী দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে সে জন্য প্রশাসনকে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
Leave a Reply